ওপেনএআই কেনার চেষ্টা ব্যর্থ, ইলন মাস্কের প্রস্তাব খারিজ করল পরিচালনা পর্ষদ
বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক একসময় যেভাবে টুইটার (বর্তমানে এক্স) কিনেছিলেন, সেভাবেই এবার চ্যাটজিপিটির মূল প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই কেনার চেষ্টা করেছিলেন। তবে এবার আর সফল হননি তিনি। মাস্কের দেওয়া প্রস্তাব সরাসরি খারিজ করে দিয়েছে ওপেনএআইয়ের পরিচালনা পর্ষদ।
মাস্কের প্রস্তাব ও ওপেনএআইয়ের সিদ্ধান্ত
প্রযুক্তি জগতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এখন অন্যতম আলোচ্য বিষয়। একসময় ওপেনএআইয়ের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন ইলন মাস্ক, তবে ২০১৮ সালে তিনি প্রতিষ্ঠানটি ছেড়ে দেন। কিন্তু ২০২২ সালে চ্যাটজিপিটি চালুর পর দৃশ্যপট বদলে যায়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রতিযোগিতায় গুগল, মাইক্রোসফটসহ বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই প্রতিযোগিতায় মাস্কও নিজের এআই প্রতিষ্ঠান xAI চালু করেন।
সম্প্রতি মাস্কের নেতৃত্বে একদল বিনিয়োগকারী ওপেনএআই কেনার জন্য প্রায় ৯,৭০০ কোটি ডলারের দরপত্র জমা দেন। কিন্তু ওপেনএআইয়ের পর্ষদ জানিয়ে দেয়, “এই কোম্পানি বিক্রির জন্য নয়।” তারা আরও দাবি করে, মাস্কের প্রস্তাব প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র সংকুচিত করার একটি কৌশল, যা তারা গ্রহণ করতে রাজি নয়।
অল্টম্যানের কটাক্ষ, মাস্কের প্রতিক্রিয়া
দরপত্র বাতিল হওয়ার পর ওপেনএআইয়ের সিইও স্যাম অল্টম্যান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) কটাক্ষ করে লেখেন, “ধন্যবাদ, কিন্তু দরকার নেই। বরং মাস্ক রাজি থাকলে আমরা ৯৭৪ কোটি ডলারে টুইটার কিনতে আগ্রহী!” অল্টম্যানের এই মন্তব্যে মাস্ক তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান এবং এক শব্দে জবাব দেন—“প্রতারক”।
মাস্ক বনাম ওপেনএআই: দ্বন্দ্বের পেছনের কারণ
২০১৫ সালে ইলন মাস্ক ও স্যাম অল্টম্যান একসঙ্গে ওপেনএআই প্রতিষ্ঠা করেন। তবে প্রতিষ্ঠানটির নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনা নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিলে ২০১৮ সালে মাস্ক পরিচালনা পর্ষদ থেকে বেরিয়ে যান। এরপর ২০২৩ সালে ওপেনএআইকে অলাভজনক থেকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা হয়, যা মাস্কের কড়া আপত্তির মুখে পড়ে। তিনি বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলাও করেছেন।
মাস্কের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ইলন মাস্ক যা করতে মনস্থির করেন, তা শেষ পর্যন্ত করেই ছাড়েন—এমনটাই মনে করেন প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা। টুইটার কেনার সময়ও অনেক প্রতিকূলতার মুখে পড়েছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি টুইটার কিনেই ফেলেন। এখন তিনি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের “ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সির” দায়িত্বে রয়েছেন, যেখানে তার মূল কাজ সরকারি ব্যয় কমানো। এর অংশ হিসেবে তিনি সরকারি তহবিল বরাদ্দ বাতিল করার পাশাপাশি অনেক সরকারি কর্মকর্তাকে বরখাস্তও করেছেন।
এখন দেখার বিষয়, মাস্ক ওপেনএআই কেনার চেষ্টা এখানেই থামান নাকি নতুন কোনো কৌশল নিয়ে আসেন। প্রযুক্তি দুনিয়া তার পরবর্তী পদক্ষেপের অপেক্ষায় রয়েছে।