মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এতিমদের সরকারি অনুদান আত্মসাতের অভিযোগ
নরসিংদীর মাধবদী উপজেলার জামিয়া মোহাম্মদিয়া দারুল উলুম এতিমখানা চরভাসানিয়া মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মুফতি হাবিবুল্লাহর বিরুদ্ধে এতিমদের জন্য সরকারি বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, প্রতি মাসে এতিম শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা প্রধান শিক্ষক আত্মসাৎ করছেন। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্থানীয়রা একাধিকবার প্রতিবাদ জানালেও তার বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে গেলে এক সাংবাদিকের ওপর হামলা চালান মুফতি হাবিবুল্লাহ। তিনি ওই সাংবাদিকের ক্যামেরার স্ট্যান্ড ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেন এবং মাইক্রোফোন ও মোবাইল ছিনিয়ে নিতে উদ্যত হন। এ ঘটনায় মাধবদী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী সাংবাদিক।
জানা গেছে, নরসিংদী সদর উপজেলার পাইকারচর ইউনিয়নের এই মাদ্রাসাটি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সমাজসেবা অধিদপ্তরের ক্যাপিটেশন গ্র্যান্টপ্রাপ্ত একটি প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকা মুফতি হাবিবুল্লাহ স্থানীয় ইউপি সদস্যের প্রত্যায়নপত্র ব্যবহার করে সরকারি অনুদানের টাকা উত্তোলন করেন, যা এতিম শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ না করে আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটিকে ম্যানেজ করেই এতদিন তিনি এই অনিয়ম চালিয়ে যাচ্ছেন। বহুবার তার অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
চরভাসানিয়া গ্রামের আকসানুল্লাহ নামে এক শিক্ষার্থী জানান, “প্রায় ৭ বছর ধরে আমি এখানে পড়ছি। সরকারি বরাদ্দে আমার নামে টাকা এলেও কোনোদিন পাইনি।”
একইভাবে জিসান নামের এক শিক্ষার্থী জানান, “আমার বাবা নেই, সংসার চালানোই কঠিন। অথচ আমার নামে সরকারি যে টাকা আসতো, তা মুফতি হুজুর আত্মসাৎ করেছেন।”
এলাকার বাসিন্দা আজিজুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, “আমার ছেলে জহিরুল ইসলামকে ভর্তি করানোর জন্য মুফতি হাবিবুল্লাহ তিন হাজার টাকা নিয়েছেন। অথচ আমার ছেলের নামে যে সরকারি বরাদ্দ আসতো, তা কখনো পাইনি।”
এ বিষয়ে পাইকারচর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. শাহীন মিয়া বলেন, “সরল বিশ্বাসে হুজুরকে প্রত্যায়নপত্র দিয়েছি, দুর্নীতির সঙ্গে আমি জড়িত নই।”
তবে প্রধান শিক্ষক মুফতি হাবিবুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
নরসিংদী সদর সমাজসেবা কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম জানান, “এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
মাধবদী থানার ওসি মো. নজরুল ইসলাম বলেন, “ভুক্তভোগী সাংবাদিকের লিখিত অভিযোগের পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এতিম শিক্ষার্থীদের প্রাপ্য অনুদান লুটপাটের এই ঘটনার বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।